জোরপূর্বক জমি দখল করলে কি করবেন? বর্তমানে আমাদের আশেপাশে প্রায় দেখতে পাই যে অন্যের জমি কোনো এক প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা সন্ত্রাসী দখল করে নিয়েছে। কিংবা মনে করুন আপনি জমি কিনলেন এখনো নামজারি করলেন না কিন্তু এরই মধ্যে আপনার জমি অন্য কেউ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এমতবস্থায় আপনি কয়েকটি পদক্ষেপের মাধ্যমে আপনার জমি আপনার করে পেতে পারেন।
এমনও হয় ব্যক্তি সঠিক সিদ্বান্ত না নিতে পাড়ার কারণে বছরের পর বছর মামলা চলতে থাকে কিন্তু জমি পাওয়া হয় না। জায়গাজমি নিয়ে এমন ঘটনা প্রায় ঘটে। জায়গাজমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও প্রচুর আমাদের দেশে। কিন্তু জমি দখল নিয়ে বিবাদগুলো নিষ্পত্তি কীভাবে করতে হয়, তা জানা নেই অনেকের। এ কারণে নিজের জমি নিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
জোরপূর্বক জমি দখল করলে কি করবেন??
বেদখল হতে দুইভাবে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে – ১) সালিশের মাধ্যমে: উভয় পক্ষের সম্মতিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, গ্রাম আদালত, মুরুব্বী কিংবা মাতব্বর এর নেতৃত্বে সালিশের মাধ্যমে বাদী তার জমি ফেরত পেতে পারেন । সালিশে মীমাংসার মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে সমাধান করা হয়ে থাকে।
গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বেদখল জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্ঠা করা সব থেকে উত্তম। কেননা এটি উত্তম এই কারণে যে, আপনি কম খরচেই জমি ফিরে পেতে পারেন। এর সুবিধাগুলো হচ্ছে-
১) আপনার আর্থিক খরচ সাশ্রয় হবে।
২) সময় কম লাগবে। এমনও হতে পারে এক দিনের সালিশে আপনার সমাধান হতে পারে।
৩) বিভিন্ন অফিসিয়াল হয়রানি থেকে বেচে যাবেন।
৪) মালিকানার সামাজিক স্বীকৃতি পেয়ে যাবেন।
২) মামলার মাধ্যমে: দুইভাবে মামলার দ্বারা প্রতিকার করা যায়। (ক) ফৌজদারি আদালতে মামলা: জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে। কোনও মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার কে তা নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন পুলিশকে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার কে, সে বিষয়ে রায় দেবেন। তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। এর মাধ্যমে শুধু প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করার জন্য প্রতিকার চাওয়া যাবে।
আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান করার সহজ নিয়ম
(খ) দেওয়ানী আদালতে মামলা: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ এবং ৮ ও ৪২ ধারায় জমিজমার মালিকানা নিয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে। মামলার মূল্যমান চার লাখ টাকার কম হলে সহকারী জজ আদালতে এবং চার লাখের বেশি হলে অসীম এখতিয়ার পর্যন্ত যুগ্ম জেলা জজ আদালতে প্রতিকার চাইতে হবে। মামলা দায়ের করতে হবে আইনজীবীর মাধ্যমে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছেন—এটি প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনও ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তাঁর মাধ্যমে দাবিদার কোনও ব্যক্তি মোকদ্দমার মাধ্যমে এর দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো—বাদী অর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবি করেছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না; বিবাদী তাঁকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না; বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না। তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হবে তাঁকে।
জোরপূর্বক জমি দখল প্রতিকার পেতে হলে যে প্রমাণ করতে হবে
- আপনাকে জমি/বাড়ি জোরপূর্বক বেদখল করা হয়েছে।
- যথাযথ আইনগত পদ্ধতি ছাড়া বেদখল করা হয়েছে।
- বেদখল হবার পূর্বে জমির ন্যায্য দখল অর্থাৎ জমির দলিল সহ অন্য কাগজপত্র আপনার হাতে ছিল।
- আপনি বেদখল হবার ৬ মাসের মধ্যে প্রতিকার চেয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
বেদখল হলে কোন বিষয়টি মনে রাখা জরুরি?
তামাদি আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, যে কোনও সম্পত্তির দখল প্রাপ্তির জন্য মামলা করার ব্যাপারে এ আইনে যে মেয়াদ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তা উত্তীর্ণ হওয়ার পর সেই সম্পত্তিতে বাদীর অধিকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তামাদি আইনের ১৪২ ধারায় বলা হয়েছে যে বেদখল হওয়ার ১২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। তামাদি আইনের ২৮ ও ১৪২ ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কোনও ব্যক্তি তার মালিকানা ও দখলে থাকা সম্পত্তি বেদখল হওয়ার ১২ বছরের মধ্যে মামলা না করলে ওই সম্পত্তিতে তার স্বত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়।
জোরপূর্বক জমি দখল করলে শাস্তি কি?
বৈধ কাগজপত্র না থাকার পরেও কেউ যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন, সরকারি খাস ভূমি বা কোন সংস্থার জমি জোর করে দখল করে রাখেন, সেজন্য এক বছর থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড, এক লক্ষ থেকে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
Pingback: জমির রেকর্ড বা খতিয়ান সংশোধন করার নিয়ম ২০২৩ | S TECH BD%