লিভার ক্যান্সার হওয়ার কারণ ও লক্ষণ। লিভার ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ এই বিষয়টি জানা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অসতর্কতা ও অসচতেননা আমাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। বর্তমানে মানুষের খাদ্যাবাসে যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি নতুন নতুন রোগ দেখা দিয়েছে। যদিও এই সময়ে আমরা সকলেই এটির সাথে পরিচিত। লিভার ক্যান্সার হওয়ার কারণ যখন কোষগুলি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং কাছাকাছি টিস্যুগুলিতে আক্রমণ করে এবং শেষ পর্যন্ত রক্ত প্রবাহ বা লিম্ফ নোডগুলির মাধ্যমে দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। লিভারের ক্যান্সার হেপাটিক ক্যান্সার নামেও পরিচিত।
প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ লোক এ রোগে আক্রান্ত হন। পুরুষদের ক্ষেত্রে মোট ক্যান্সারের ৭.৫ ভাগ লিভার ক্যান্সার, আর নারীদের বেলায় এ সংখ্যাটি ৩.২ ভাগ। শুধু জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট (এনসিআরআই) ও হাসপাতালেই গত তিন(৩) বছরে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৮৩ হাজার ৭৯৫ জন রোগী। যাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৩৩ জন রোগীর শরীরে, যা শতাংশের হিসাবে ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ। নিবন্ধিত রোগীদের মধ্যে ১৯ হাজার ৫৪৬ জন (৫৫ শতাংশ) পুরুষ ও ১৬ হাজার ১৮৭ জন (৪৫ শতাংশ) নারী।
লিভার ক্যান্সার হওয়ার কারণ
১. হিমোক্রোমাটোসিস বা ইতিপূর্বে বংশে কারো লিভার ক্যান্সার হয়ে থাকলে হতে পারে।
২. হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস বা হেপাটাইটিস ‘সি ‘ দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
৩. ডায়াবেটিসের কারণেও লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
৪. পেটে চর্বি জমে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
৫. অ্যালকোহল অত্যধিক গ্রহণ
৬. দীর্ঘসময় ছত্রাক যুক্ত বা পচা-বাসি খাবার খেলে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
লিভার ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণ
১. ক্ষুধামান্দ্য বা ক্ষুধা কমে যাওয়া
২. অকারণে ওজন কমে যাওয়া বা ওজন কমা
৩. বমি হওযা বা বমি বমি ভাব
৪. দুর্বলতা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি
৫. পেটের ওপরের দিকে ব্যথা
৬. পেট ফুলে যাওয়া বা পেটে ফোলাভাব
৭. চোখ ও ত্বক হলুদভাব দেখানো এবং জন্ডিস
লিভার ক্যান্সার নির্ণয় করা হয় যেভাবে
লিভার ক্যান্সার নির্ণয় করা হয় যেভাবে
১. এটি নির্ণয়ের সহজ উপায় একটি নির্ভরযোগ্য আল্ট্রাসনোগ্রাম।
২. কখনও কখনও সিটি-স্ক্যানেরও প্রয়োজন পরে।
৩. কিছু ক্ষেত্রে লিভার ক্যান্সার নির্ণয় করার জন্য আরও আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন এম.আর.আই.ও সিটি এনজিওগ্রামের এবং রক্তের এ.এফ.পি. পরীক্ষার দরকার পরতে পারে।
৪. রক্তের এ.এফ.পি. পরীক্ষাটি লিভার ক্যান্সারের একটি মোটামুটি নির্ভরযোগ্য টিউমার মার্কার।
৫. লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত যে কোন ব্যক্তিরই উচিত প্রতি ৬ মাসে একবার এ.এফ.পি. ও আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা।
৬. লিভার ক্যান্সারের ডায়াগনোসিস কনফার্ম করতে হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম আর এমন কি সিটি গাইডেড এফ.এন.এ.সি. জরুরি।
সুস্বাস্থ্যের জন্য সেরা ১০টি হেলথ টিপস
লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা
অস্ত্রোপচারের বিকল্প হিসেবে
১. টিউমার রিকশনের জন্য সার্জারি
২. লিভার ট্রান্সপ্লান্ট
স্থানীয়করণের চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে
১. রেডিওকম্পাঙ্ক অপসারণ
২. ক্রায়োব্লেশন
৩. অ্যালকোহল ইনজেকশন
৪. কেমোম্বোলাইজেশন
৫. তেজস্ক্রিয় মালা
স্ট্যান্ডার্ড হস্তক্ষেপ
১. কেমোথেরাপি
২. বিকিরণ থেরাপি
৩. লক্ষ্যযুক্ত ড্রাগ থেরাপি
৪. ইমিউনোথেরাপি
লিভার ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের এর এমডি এন্ডারসন ক্যান্সার সেন্টার এর গবেষকরা সংশ্লিষ্ট গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তারা জানান যে, একজন ক্যান্সারের রোগীর আটটি লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলে দেওয়া যাবে তিনি আর কতদিন বাঁচবেন। তারা রোগীর দৈহিক ও মস্তিষ্কের ৫২ ধরনের পরিবর্তন শনাক্ত করেন। এ সব মিলে ৮টি লক্ষণ প্রকাশ পায়। আগের গবেষণার পথ ধরে এদের মধ্যে কারা মারা যাবেন তা নিশ্চিত করা গেছে।
১. আলোর বৃদ্ধি বা হ্রাসে চোখের পিউপিল কোনো প্রতিক্রিয়া করে না। অর্থাৎ সেই রোগীর সামনে আপনি যখন আলো বৃদ্ধি করাবেন এবং আলো কমাবেন তখন এটা তার চোখের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না।
২. কথা বলার সশয় মুখ-জিহ্বার প্রতিক্রিয়া কমে যায়।
৩. দৃষ্টিশক্তি কমে আসে।
৪. প্রায়ই চোখের পাতা বন্ধ করতে পারেন না রোগী।
৫. নাক থেকে ঠোঁটে দুই কোণ পর্যন্ত যে রেখা পড়ে (হাসার সময় এই রেখা তৈরি হয়) তাতে ব্যাপক ভাঁজ পড়ে যায়। অর্থাৎ কোন স্পট আছে বলে মনে হবে
৬. মাথা সামনের দিকে নুয়ে আসে।
৭. অনেক রোগীদের ক্ষেত্রে কণ্ঠনালী থেকে গর গর আওয়াজ আসে।
৮. যে প্রত্যঙ্গ খাবারের উপাদান ও পুষ্টি শুষে নেয়, অর্থাৎ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল এর ওপরের অংশে রক্তক্ষরণ হয়।
লিভার ক্যান্সারের এই আটটি লক্ষণ যে সব রোগীর মধ্যে দেখা যেতে শুরু করেছিল, তাদের সবাই পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে মারা গেছেন। সূত্র : ফক্স নিউজ
আগে থেকেই লিভার ক্যান্সারের বিষয়ে সতর্ক থাকুন এবং নিজের পরিবারকে সতর্ক রাখুন। কেননা এটি শুধু ব্যক্তি জীবনে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে না। ব্যক্তির পরিবারও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েন। তাই ফরমালিন মুক্ত খাবার খান এবং বাসার খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন সবসময়। সবুজ শাকসবজি খান। ইসলামিক খাবার নিয়ম মেনে চলুন। বেশি বেশি পরিশোধিত পানি পান করুন তেল জাতীয় অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন