ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে। কীভাবে করবেন ই-পাসপোর্ট। এই সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে অনলাইনে সঠিক ভাবে ই পাসপোর্ট আবেদন করতে পারেন না কিংবা আবেদন করার পরেও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে নানাবিধ জামেলায় পড়তে হয়। বিশ্বের ১১৯ তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করেছে বাংলাদেশ। এখন থেকে যে কেউ চাইলে ঘরে বসে ই-পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবে।
তাই সহজে কিভাবে ঘরে বসে আবেদন করতে পারেন সে বিষয় কথা বলবো। কি কি কাগজ প্রয়োজন এবং কত টাকা খরচ সে বিষয় আজকে জানবো।
ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৩
বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সর্বশেষ নির্দেশনা 23 Oct 2022 অনুসারে ই পাসপোর্ট করতে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। তার সাথে নাগরিকত্ব সনদ এবং পেশার প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। সরকারি চাকরিজীবীদের ই পাসপোর্ট করতে GO অথবা NOC প্রয়োজন।
১৮ বছর বয়সের বেশি হলে ই পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- মূল জাতীয় পরিচয় পত্র (NID Card) এবং এর ফটোকপি
- ই পাসপোর্ট আবেদনের সামারি – Application Summery
- পাসপোর্ট আবেদনের ফরম – Application Form
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান / ব্যাংক ড্রাফ কপি
- নাগরিক সনদ
- পেশাগত সনদের ফটোকপি
২০ বছরের কম যাদের NID Card হয়নি
20 বছরের কম বয়সী ও জাতীয় পরিচয় পত্র হয়নি তাদের পাসপোর্ট করার জন্য যা যা প্রয়োজন-
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC) ও এর ফটোকপি
- ই পাসপোর্ট আবেদনের – Application Summery
- পাসপোর্ট আবেদনের ফরম – Application Form
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান / ব্যাংক ড্রাফ কপি
- নাগরিক সনদ
- পেশা ছাত্র ছাত্রী হলে Student ID / Certificate
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ঠিকানা বের করার সহজ পদ্ধতি
ই-পাসপোর্ট আবেদন যেভাবে করবেন
অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খুলে সহজেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়। আবেদন করার পরে তা জমা দেওয়ার তারিখ পাওয়া যাবে অনলাইনেই। কাগজপত্রেও সত্যায়ন প্রয়োজন নেই। প্রথমে আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন ওয়েবসাইটে । ওয়েবসাইটে ‘ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন’–এ ক্লিক করতে হবে। সেখানে শুরুতেই অ্যাপ্লাই অনলাইন ফর ই-পাসপোর্ট/রি-ইস্যু বাটনে ক্লিক করে সরাসরি আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। তবে আবেদন করার আগে দেখে নিতে হবে, ই-পাসপোর্ট আবেদনের পাঁচটি ধাপ।
1.বর্তমান ঠিকানার জেলা শহরের নাম ও থানার নাম নির্বাচন করে ক্লিক করতে হবে।
2.ব্যক্তিগত তথ্য সংবলিত ই-পাসপোর্টের মূল ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে।
3. মেয়াদ ও পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুযায়ী ফি জমা দিতে হবে।
4. ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে টাকা জমা দেওয়া যায়।
5. অনুমোদিত পাঁচ ব্যাংকের যেকোনো একটিতে টাকা জমা দিয়ে সেই জমা স্লিপের নম্বর নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সব কাজ শেষ হলে ‘ফাইনাল সাবমিট’ করতে হবে।
এরপরই আপনার তথ্যগুলো পাসপোর্টের কার্যালয়ের সার্ভারে চলে যাবে। তবে খুবই সতর্কতার সাথে আবেদন করা উচিত। সাবমিট করার আগে বার বার দেখে নেওয়া উচিত। যাতে কোনো তথ্য ভুল না হয়ে যায়। কেননা বড় কোনো ভুল হয়ে গেলে আবেদন বাতিল করে পুনরায় করতে হয়। তবে ছোট ছোট ভুল হলে তা সংশোধন করা যায়। তাই সতর্কতার সাথে আবেদন করা উচিত।
আবেদন করার পরে যা করতে হবে
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ ও ব্যাংকের মাধমে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করে ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য তারিখ নেবেন। তারপর নির্ধারিত তারিখে অনলাইন আবেদন ফরমের কপি, পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রিসিট, যে বাসায় থাকেন সে বাসার বিদ্যুৎ বিলের কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি(NID Card) ও পুরান পাসপোর্টের কপিসহ পাসপোর্ট অফিসে যাবেন। সঙ্গে অবশ্যই মূল কাগজপত্রগুলোও সঙ্গে নেবেন। এরপর ছবি ও আঙুলের ছাপের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যাবেন । ছবি তোলা, সব আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি গ্রহণ শেষে আপনাকে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ আপনাকে একটি রিসিট দেবে। পাসপোর্ট গ্রহণের সময় ডেলিভারির রসিদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। আপনার পাসপোর্ট হয়ে গেলে আপনাকে মেসেজ করে জানাবে। এরপর আপনি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার পাসপোর্ট নিয়ে আসবেন।
ই-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণ (২১ কর্মদিবস) ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি (১০ কর্মদিবস) ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতীব জরুরি (২ কর্মদিবস) ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার ৭৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। সব ফির সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। ১৮ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী আবেদনকারীরা কেবলমাত্র ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পাবেন। অতি জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন সঙ্গে আনতে হবে। (তথ্য: প্রথম আলো )
অবশেষে বলা যায়, ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে।