সর্বজনীন পেনশন চালু হল বাংলাদেশে। উন্নত বিশ্বে আমরা অনেক আগে থেকে সর্বজনীন পেনশন দেখলেও অবশেষে আমাদের দেশেও চালু হয়েছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম। গত ২০ আগস্ট ২০২৩ আজকের প্রতিকার তথ্য মতে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৭৫ জন চাঁদা জমা দিয়েছেন। জমা হওয়া চাঁদার পরিমাণ ২ কোটি ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং নিবন্ধন ছাড়ালো ৫০ হাজার।
গত ৭ বছর আলোচনার পরে অবশেষে পেনশন ব্যবস্থা চালু হল. ১৮ বছরের যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন – আমাদের যারা সরকারি চাকরিজীবী আছেন তারা পেনশন পান, কিন্তু যারা চাকরি করেন না তারা তো পান না তাই এটি তাদের জন্য।
সবাই কি সর্বজনীন পেনশনের জন্য নিবন্ধন করতে পারবে?
জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছর তাদের প্রত্যেকে এই স্কিং এ যোগ দিতে পারবেন। তবে অব্যশই NID কার্ড থাকতে হবে। প্রথম দিকে এটি ব্যাক্তিস্বাধীন থাকলেও পরে বাধ্যতামূলক করা হবে।
তবে যারা প্রবাসী বাংলাদেশী যাদের কাছে NID কার্ড নেই তারা পাসপোর্ট এর মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন।তবে দ্রুত NID কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে কপি জমা দিতে হবে। আবার কারো বয়স যদি ৫০ বছর হয়ে থাকে সেই নিবন্ধন করতে পারবে কিন্তু পেনশন পাবেন যদি একটানা ১০ বছর চাঁদা চালিয়ে নিতে পারেন।
সরকার মোট ৬টি সর্বজনীন পেনশন স্কিমের কথা ঘোষণা করেছে। তবে আপাতত চালু হয়েছে চারটি স্কিম। এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। আসুন জেনে নেওয়া যাক ৪ টি সম্পর্কে।
চার্ট বুজার জন্য আমরা আপনার কাছে একটি উদাহরণ পেশ করি আশা করি পরেরগুলো বুজতে পারবেন –
আমরা এইখানে প্রবাস স্কিং থেকে ১ম চার্ট ব্যবহার করবো। কোনো ব্যক্তির বয়স যদি ১৮ হয়ে থাকে সে যদি ওই বয়সে নিবন্ধন করে তাহলে ৬০ বছর পর্যন্ত সে ৪২ বছর চাঁদা দিলো। যদি সে প্রতি মাসে ৫০০০ করে টাকা দেয় তাহলে ৬০ বছর পরে সে প্রতি মাসে পাবে ১,৭২,৩২৭ টাকা। যদি সে প্রতি মাসে ৭,৫০০ করে টাকা দেয় তাহলে ৬০ বছর পরে সে প্রতি মাসে পাবে ২,৫৮,৪৯১ টাকা। যদি সে প্রতি মাসে ১০,০০০ করে টাকা দেয় তাহলে ৬০ বছর পরে সে প্রতি মাসে পাবে ৩,৪৪,৪৫৫ টাকা।
প্রবাস
একটি শুধু বিদেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। এর মাসিক চাঁদার হার ৫০০০(পাঁচ হাজার), ৭৫০০(সাড়ে সাত হাজার) ও ১০,০০০(দশ হাজার). উক্ত ব্যক্তি চাইলে যে দেশে আছেন সে দেশের মুদ্রায় দিতে পারবেন। আবার দেশে এসে দেশীয় মুদ্রায় ও দিতে পারে।
প্রগতি
এই স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য। এর মাসিক চাঁদার হার ২০০০(দুই হাজার), ৩০০০(তিন হাজার) ও ৫০০০(পাঁচ হাজার). আবার প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের মালিকও প্রগতি স্কিমে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে মোট চাঁদার অর্ধেক কর্মচারী এবং বাকি অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বহন করবে।
সুরক্ষা
এটি স্বনির্ভর ব্যক্তির জন্য। কেউ কোথাও চাকরি করেন না অর্থাৎ নিজে নিজে উপার্জন করেন। যেমন ফ্রিল্যান্সার, কৃষক, শ্রমিক ইত্যাদি পেশার লোকজন। এখানে চাঁদার হার ৪ রকম ১০০০(এক হাজার ), ২০০০(দুই হাজার), ৩০০০(তিন হাজার) ও ৫০০০(পাঁচ হাজার).
সমতা
এই স্কিমটি মূলত দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসরত স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য। এখানে চাঁদার হার ১০০০(এক হাজার). এখানে ৫০০(পাঁচশো ) টাকা দিবে ব্যক্তি নিজে এবং ৫০০(পাঁচশো ) টাকা দিবে সরকার। এক্ষেত্রে দারিদ্রসীমা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। যেমন বর্তমানে বছরে যাদের আয় এখন বছরে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে তারাই কেবল এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
সর্বজনীন পেনশনের সুবিধা কি?
পেনশনারগণ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে। কেউ যদি ৭৫ বছর পূরণ হবার আগেই মারা যান তাহলে তার নমিনি ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পাবেন।
৫০ বছর বয়সের কেউ যদি নিবন্ধন করেন ১০ বছর চাঁদা দেবার আগেই মারা যান তাহলে তার জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে.
আবার কারো যদি প্রয়োজন পরে টাকা উত্তোলনের সে সুযোগও থাকছে। তার মোট জমার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ অর্থ তিনি আবেদনের প্রেক্ষিতে ঋণ হিসাবে নিতে পারবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কীমে ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানেরও অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদা নির্ধারণ করে দেবে পেনশন কর্তৃপক্ষ। তহবিলে জমা করা টাকা নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আর্থিক রিটার্ন নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা করবেন।