আমরা জানি যে কোন দেশের সরকারের আয়ের উৎস বা আয়ের উৎসের বড় একটি অংশ আসে জনগণের প্রধানকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন করের) থেকে। তাই সরকারের এই সকল ভূমি সংক্রান্ত বিষয়গুলি ব্যবহারের জন্য প্রত্যেক জনগণকে অর্থাৎ প্রত্যেক ভূমি মালিককে সরকারকে বা সরকারের ঘরে খাজনা প্রদান করতে হয়। জমিজমার ক্ষুদ্র এককে এই সকল খাজনা সম্পর্কে বা খাজনা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
তবে আপনি যদি দীর্গদিন খাজনা না দিয়ে থাকেন এক্ষেত্রে ৬.২৫ ভাগ সুদ জ্যামিতিক হারে যোগ করতে হবে।
ভূমি উন্নয়ন কর কি?
কোনো জমি ভোগ দখলের সুবিধা গ্রহণের জন্য সরকারকে প্রতি শতাংশ জমির জন্য বছর ভিত্তিক যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদান করতে হয় তাকেই ভূমি উন্নয়ন কর বলে। ভূমি উন্নয়ন কর দেয়ার পর দাতা দাখিলা পাওয়ার অধিকার লাভ করেন। দাখিলা দেয়া না হলে তা অধ্যাদেশের লংঘন হবে। এই দাখিলা জমির মালিকানা প্রমাণের গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে দেয়া যায় কি?
এই ওয়েবসাইটে গিয়ে এনআইডি মোবাইল নম্বর, এনআইডি, নাম ঠিকানা তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে আপনি পর্চার কপি আপলোড করলেই হোল্ডিং নম্বর এন্ট্রি দিয়ে দিবে ভূমি অফিস। অতপর আপনি হোল্ডিং নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেই ভূমি কর পরিশোধ করতে পারবেন। সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমি সেবা গ্রহিতাদেরকে স্বল্প ব্যয়ে, স্বল্প সময় ও সহজ সেবা প্রদানের জন্য সমগ্র বাংলাদেশে ভূমি উন্নয়ন কর ডিজিটাল সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। উক্ত সফটওয়্যারে মালিকানাধীন জমির হোল্ডিং রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম চলছে।
ভূমি উন্নয়ন হার কত টাকা?
বাংলা ১৩৭৮ সনে স্বাধীনতা অর্জিত হলে আগের অনাদায়ী সকল খাজনা মওকুফ করে বাংলা ১৩৭৯ সন থেকে খাজনা ধার্য করা হয়। বাংলা ১৩৮২ সন পর্যন্ত কোন পরিবারের ২৫ বিঘা বা ৮.২৫ একর এর উর্দ্ধে জমির জন্য খাজনা ও শিক্ষা কর ছিল। ২৫ বিঘার কম জমির জন্য শুধু শিক্ষা কর দিতে হতো।
বাংলা ১৩৯৪ সন (১৯৮৭ সাল) থেকে বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৪ সাল) পর্যন্ত ২ একর জমির জন্য শতাংশ প্রতি ৩ পয়সা, সব মিলিয়ে এক টাকার কম নয়। ২ একর থেকে ৫ একর পর্যন্ত জমির জন্য শতাংশ প্রতি ৩০ পয়সা। ৫ একর থেকে ১০ একর পর্যন্ত শতাংশ প্রতি ৫০ পয়সা। ১০ একরের বেশি জমি হলে শতাংশ প্রতি ২ টাকা। বাংলা ১৩৯৮ সনের ১ বৈশাখ থেকে ২৫ বিঘা বা ৮.২৫ একর পর্যন্ত কৃষি জমির ওপর থেকে সকল ধরনের কর প্রত্যাহার করা হয়।
জমির পুরাতন দলিল বের করুন খুব সহজে নিজের মোবাইল দিয়ে 2023
সময়মত ভূমি উন্নয়ন পরিশোধ করুন জরিমানা থেকে দূরে থাকুন। নিচে একটি চার্ট দেওয়া হলো–
জিরো ভূমি উন্নয়ন কর ২০১৫ । যে সকল ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় না
- ২৫ বিঘার কম জমি থাকলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় না ৷ স্টেটমেন্টভূক্ত জমি ২৫ বিঘার কম হলেও কর দিতে হবে। তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক বিবরণী ভাংগার আদেশ হলে ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফ হবে।
- ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী পর্যায়ে নিজে শারীরিক পরিশ্রম করে হাঁস-মুরগীর খামার/ডেইরী ফার্ম হিসাবে কোন জমি ব্যবহার করলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় না। (০.৫০ হতে ১.৪৯ একর পর্যন্ত জমির মালিককে প্রান্তিক চাষী এবং ১.৫০ হতে ২.৪৯ একর পর্যন্ত জমির মালিককে ক্ষুদ্র চাষী বলা হয়)
- ৫টির কম হস্তচালিত তাঁত জমির মালিক নিজে শারীরিক পরিশ্রম করে চালালে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয়না।
- মসজিদ, ঈদগাহ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা, কবরস্থান, শ্মশানঘাট এর ভূমি উন্নয়ন কর জেলা প্রশাসক মওকুফ করতে পারেন। এরজন্য তার কাছে আবেদন করতে হবে-ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না।
ভূমি উন্নয়ন করের রেট 2023 । জমির বা ভূমি ধরণ অনুসারে খাজনা বা ভূমিকর নির্ধারিত হয়ে থাকে
প্রতি বছর ২ টাকার মওকুফ দাখিলা সংগ্রহ করতে হয়?
না। ২৫ বিঘা বা ৮.২৫ একরের কম জমির মালিকেরা ২ টাকার একটি মওকুফ দাখিলা পাবেন। একাধিক বছরের জন্য একটি মওকুফ দাখিলাই যথেষ্ঠ। মনে রাখতে হবে- একে ভূমি উন্নয়ন কর হিসাবে বিবেচনা করা হয়না। বিবিধ আদায় হিসাবে গণ্য হয়। এজন্য প্রতিবছর ২ টাকার মওকুফ দাখিলা সংগ্রহের প্রয়োজন নেই।
ভূমি উন্নয়ন কর না দিলে কি জরিমানা দিতে হয়?
ভূমি উন্নয়ন কর ১ বছরের বকেয়া হলে সংশ্লিষ্ট বাংলা সনের ৩০শে চৈত্রের পরই উক্ত কর বকেয়া বলে গন্য হবে এবং মূল পাওনাকৃত করের সাথে ৬.২৫ হারে সুদ যোগ হবে এবং যত বছরের কর বাকী থাকবে ততগুন সুদ বেশী হবে এবং মূল করের সাথে যুক্ত হবে ৷
বিষয়টি একটু সহজ করার জন্য একটা উদাহরণ দেওয়া যাক–
একজন কৃষি জমির মালিককে প্রতি বছরে ১০০ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হলে আর তা বাংলা ১৪১৬ সন হতে বাংলা ১৪২১ পর্যন্ত ৬ বছর যাবত বকেয়া থাকলে তাকে বর্তমানে কত টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হবে? এখানে ৬ বছরের মধ্যে শেষ বছরটিকে তথা ১৪২১ সালকে হাল সন ধরে পূর্বের ৫ বছরের করের সাথে জ্যামিতিক হারে সুদ দিতে হবে।
সুতরাং ১০০ x ৬ = ৬০০ টাকা। ১৪২০ সাল বা ৫ম বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ১) = ৬.২৫ টাকা। ১৪১৯ সাল বা ৪র্থ বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ২) = ১২.৫০ টাকা। ১৪১৮ সাল বা ৩য় বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ৩) = ১৮.৭৫ টাকা। ১৪১৭ সাল বা ২য় বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ৪) = ২৫ টাকা। ১৪১৬ সাল বা ১ম বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ৫) = ৩১.২৫ টাকা। সুতরাং ৬ বছরের জন্য মোট (৬০০+৬.২৫ +১২.৫০+ ১৮.৭৫+ ২৫+ ৩১.২৫)= ৬৯৩.৭৫ টাকা বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হবে